স্বামী দু’বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী পক্ষাঘাত রোগে। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী পা ভেঙে জিবির ট্রমা সেন্টারে ভর্তি দু মাস ধরে। নিঃসন্তান এই দম্পতির আর্থিক সাহায্যার্থে গ্রামের লোকজন ছাড়া আর কেউ এগিয়ে আসছেন না। জিবি ট্রমা সেন্টারের তিনতলায় ৯৮ নাম্বার শয্যায় অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছেন রমেন্দ্র ভট্টাচার্যীর স্ত্রী সীতা ভট্টাচার্যী। অন্যদিকে পক্ষাঘাত রোগে বাড়ির বিছানায় পড়ে রয়েছেন রমেন্দ্র ভট্টাচার্যী। উনাদের বাড়ি খোয়াই ব্লকের অন্তর্গত মধ্য সিঙ্গি ছড়া গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডে। এই দম্পতির কোন সন্তান না থাকায় একদিকে যেমন তাদের সেবা- শুশ্রুষার কোন লোকজন নেই আবার অন্যদিকে আর্থিকভাবে অতি দুর্বল এই পরিবারটিকে রক্ষা কর্তা হিসেবে গ্রামের মানুষজন ছাড়া আর কেউ নেই। এমন ধরনের একটি দুর্দশা গ্রস্থ পরিবারকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার মতো এই সমাজে কেউ এগিয়ে না আশায় শুধু চোখের জল ফেললেন পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত রমেন্দ্র ভট্টাচার্যী।
সম্প্রীতি খোয়াই খাদ্য দপ্তরের জনৈক কর্মচারীর মাধ্যমে এই ধরনের একটি পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেল খোয়াইয়ের মধ্য সিঙ্গিছড়া গ্রামে। পরিবারটির দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করলেও তাদের হাতে নেই একটি টাকাও। সরকারি রেশনের চাল ডাল চিনি পর্যন্ত তিনি আনতে পারছেন না। কথা বলতে গিয়ে রমেন্দ্র বাবু বলেন তিনি সুস্থ থাকতে দিনমজুরের কাজ করতেন। হঠাৎ একদিন পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় উনার সঠিক কোন চিকিৎসা হয়নি। তখন সময়ে স্ত্রী সীতা ভট্টাচার্যী উনার সেবা-শুশ্রূষা করতেন। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। এবং সেই সময় তিনি হঠাৎ নিজ বাড়িতেই পড়ে গিয়ে একটি পা ভেঙ্গে ফেলেন। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের একটি ক্লাব নিউ উদয় তরুণ সংঘের ছেলেরা উনাকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যান। গত দু মাস ধরে ওনার স্ত্রী একা জিবি হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন। সপ্তাহে একদিন পাড়ার ছেলেরা কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করে উনাকে দেখে আসেন। বিছানায় শয্যাশায়ী রমেন্দ্র বাবু নিজে লাঠি ভর দিয়ে কোনরকমে দাঁড়াতে পারলেও রান্নাবান্না বা চলাফেরা করতে পারেন না। প্রাকৃতিক কাজ করতে গেলেও অন্য মানুষের সাহায্য নিতে হয় ওনাকে।পাড়ার মহিলারা গত দু মাস ধরে উনাকে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এরকম একটি অসহায় পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার যদি আন্তরিকতার সহিত পাশে দাঁড়াতো তাহলে হয়তো এই দম্পতি কিছুদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে যেত।
গ্রামের স্থানীয় মানুষজন জানালেন এরকম একটি পরিবারকে সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন। উনার স্ত্রী একা পড়ে আছেন জিবি হাসপাতালে। উনাকে দেখার মত কেউ নেই। রাজ্যের সাংসদ তথা প্রতিমা ভৌমিক রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। তিনি এই পরিবারটির প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হলে মহিলাটি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুদিন বেঁচে যেতেন। একই রকম ভাবে রমেন্দ্র ভট্টাচার্যীর সরকারিভাবে সঠিক চিকিৎসা হলে হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে যেতেন। গত দু মাস ধরে এই পরিবারটির পাশে কেউ এসে দাঁড়ায় নি। গ্রামের মানুষ এবং স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরাই এই দম্পতির একমাত্র ভরসা। অবিলম্বে এই দম্পতির সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার গ্রহণ করলে হয়তো পরিবারটি পুন:রায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো।
পক্ষাঘাত ও ক্যান্সারে আক্রান্ত দম্পতির জীবন যুদ্ধে সরকারি সাহায্য সহায়তা নেই।
105
previous post