প্রেমের গানে শ্রীজাত লিখেছিলেন, ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন।’ তারও অনেক আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘স্বপ্ন’ দেখেছিলেন, ‘রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্ ধাপ্।’ যে কবি কলকাতার রাস্তায় ট্রামে চাপা পড়ে জীবন হারিয়েছিলেন, সেই জীবনানন্দ দাশও লিখেছেন ‘সারা দিন ট্রাম-বাস’ নামে গোটা একটা কবিতা। এই সে দিন ‘পিকু’ সিনেমায় অভিনয় করতে এসে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোয় সাইকেল চালালেন অমিতাভ বচ্চন। আরও কত গানে, কবিতায়, সিনেমায়, সাহিত্যে জড়িয়ে কলকাতার ট্রাম। অন্যতম উদাহরণ সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবি। শুরুর কয়েক মিনিট শুধুই ট্রামের তার।ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী (শুধু পরিচয় নয়, ট্রাম কলকাতার অভিজ্ঞানও। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম চলে না) সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার। আগামী দিনেও জুটবে না বলেই মনে করেন শহরের ট্রামপ্রেমীরা। ট্রামকে শেষ করে দেওয়ার অভিযোগ সিপিএমের। আর রাজ্য সরকারের যা বক্তব্য, তাতে শহরের ‘হেরিটেজ’ হিসাবে ট্রামকে রক্ষা করার সদিচ্ছা থাকলেও দুর্গাপুজোর মতো হেরিটেজ তকমা জোগাড়ের তেমন তাগিদ আপাতত নেই।অথচ কলকাতার গণপরিবহণ বিষয়ের গবেষক সৌভিক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, কলকাতার ট্রামের হেরিটেজ তকমা পাওয়ার মতো সব যোগ্যতাই রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতার ট্রামের হেরিটেজ তকমা পেতে কোনও বাধা নেই। ইউনিসেফের যে সব ধারা রয়েছে, তাতে একটি হচ্ছে চালুর পরে কখনও বন্ধ হয়েছে কি? কলকাতায় সেটা হয়নি। আর একটা বিষয় দেখা হয়। এটা কি শুধুই বিনোদনের না কি সাধারণের উপকারেও লেগেছে? ট্রাম তো দেড়শো বছর ধরে সাধারণকেই পরিষেবা দিয়ে এসেছে। দেখা হয়, প্রযুক্তিগত ভাবে কি একেবারে বদলে গিয়েছে? সেটাও হয়নি কলকাতায়। আসল কারণ হল ট্রামকে হেরিটেজ করার সেই উদ্যোগটাই নেই। তাতেই ট্রামের স্বপ্নভঙ্গের ভয়।’’
দেড়শো বছর পার করেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জুটল না শহর কলকাতার অন্যতম অভিজ্ঞানের, কেউ কথা বলেনি
by admin
written by admin
96