Home » শীঘ্রই চালু হবে কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট

শীঘ্রই চালু হবে কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট

by admin

প্রতিনিধি,বিশালগড়, ৪ ডিসেম্বর ।। করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ১০ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট । পুনরায় সীমান্ত হাট চালু করার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশের জেলা প্রশাসনিক পর্যায়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে পথ চলা শুরু করেছিলো কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট। ভারতের সিপাহীজলা জেলা এবং বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করেছিল হাট। এটি ইন্দো বাংলার চতুর্থ সীমান্ত হাট। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা এবং ভারতের সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মহকুমা প্রশাসনের তত্বাবধানে ঝাঁক জমক ভাবে চলছিল এই হাট। সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের দুই দেশের একশো জন ব্যবসায়ী হাটে ব্যবসা করার ছাড়পত্র পেয়েছিল। সীমান্ত হাটকে কেন্দ্র করে কসবেশ্বরী কালী মন্দির প্রাঙ্গণ আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। সীমান্ত হাট আকর্ষন করে দুই পারের মানুষকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কমলাসাগর দীঘি, কসবেশ্বরী কালী মন্দিরে সারাবছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। শীতকালে বনভোজন প্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। ওপারের কসবা রেলস্টেশন থেকে পায়ে হাঁটা দুরত্বে রয়েছে সীমান্ত হাট। সীমান্ত হাট পরিদর্শনের পাশাপাশি ত্রিপুরার রাজন্য স্মৃতি বিজড়িত কমলাসাগর গ্রামীণ পর্যটন কেন্দ্র আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ভিটেমাটি ছেড়ে আসা এপারের অনেকের আত্মীয় পরিজন রয়েছে ওপারে। অনেকে হাটে গিয়ে আত্মীয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ পেতেন। কয়েক ঘন্টার হাটে হাজারো মানুষের আগমনে সরগরম হয়ে উঠতো। দুই পারের মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করা সহ সীমান্ত এলাকার অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত এবং বিকল্প রোজগারের দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে সীমান্ত হাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের গ্রাহকরা ভারতের প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানে ভিড় করতেন। আর ভারতের গ্রাহকদের ওপারের নোনা ইলিশ, শুকনো মাছের প্রতি আকর্ষণ ছিল। সারাদেশে অনেকগুলি সীমান্ত হাট রয়েছে। ত্রিপুরা বাংলাদেশ সীমান্তে রয়েছে কমলাসাগর তারাপুর এবং শ্রীনগর ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাট। রাজ্যে আরও দুটি সীমান্ত হাট চালু করার বিষয়ে ঢাকা এবং দিল্লি পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। যা-ই হোক করোনা মহামারী প্রতিরোধের অঙ্গ হিসাবে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সীমান্ত হাটের ঝাপ অনির্দিষ্ঠকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। রোজগার হারায় একশোটি পরিবার। করোনা আজ নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থাও স্বাভাবিক। সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট পুনঃ চালুর জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু করে। সিপাহীজলা জেলা শাসক বিশ্বশ্রী বি এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ওপারের সবুজ সংকেত এলেই পুনরায় চালু হবে সীমান্ত হাট।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন সীমান্ত হাট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর কসবা উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেলেনা পারভিনের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কসবা পুর পরিষদের মেয়র এম জি হাক্কানী, ইউ এন ও মাসুদ উল আলম, সহকারী কমিশনার ( ভূমি) সঞ্জীব সরকার, কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সহ সীমান্ত হাট পরিচালক পর্ষদের সদস্যরা। এখন করোনা মহামারীর আতঙ্ক নেই। তাই হাট চালুর ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় খুব দ্রুত সীমান্ত হাট চালু করা হবে। দুই দেশের জেলা প্রশাসন পর্যায়ে আরেকটি বৈঠক হবে । হাট পরিচালনা পর্ষদ হাটের পরিকাঠামো ত্রুটিগুলো নিরূপণ করে সমাধানের উদ্যোগ নেবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বর মাসেই ফের চালু হবে কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট। এতোদিন বাংলাদেশ প্রশাসনের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল ভারতের সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন। দুই দেশের প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সীমান্ত হাটের ঝাপ খুলবেন। আবারও দুই দেশের ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে কমলাসাগর তারাপুর সীমান্ত হাট।

You may also like

Leave a Comment