প্রতিনিধি কৈলাসহর:-আজ ৩০শে ডিসেন্বর শনিবার কুমারঘাট প্রাইমারি মার্কেটিং কোপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা এবং ৬৭ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারঘাট কোপারেটিভ হল ঘরে। সমবায়ের পতাকা উত্তোলন এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ভগবান দাস, জেলা সভাধিপতি ঊনকোটি জেলা পরিষদ অমলেন্দু দাস, কুমারঘাট প্যাক্সের সভাপতি কার্তিক দাস ও ফটিকরায় প্যাক্সের সভাপতি সুস্মিতা দত্ত কর,বিশিষ্ট সমবায়ী পবিত্র দেবনাথ ও অনিমেষ সিনহা,কোপারেটিভ সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান মলয় কৃষ্ণ দত্ত,ডেপুটি রেজিস্টার কো-অপারেটিভ সোসাইটি বিজয় রায় ও আইসিডিপি জেনারেল ম্যানেজার ঊনকোটি জেলা বিশ্বজিৎ দাস সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারঘাট প্রাইমারি মার্কেটিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শিবেন্দু ঘোষ।এরপর কোপারেটিভ সোসাইটির বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ এবং সমিতির হিসেব নিকেশ প্রকাশ করেন কোপারটিভ সোসাইটির ম্যানেজার দীপক রঞ্জন দেব।বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা সভাধিপতি অমলেন্দু দাস বলেন কৈলাসহর থেকে সমবায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে ২৫ জন সদস্যের হাত ধরে।সে সময় উক্ত কোপারেটিভের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন কুমারঘাট ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সান্যাল সাহেব।একইভাবে উক্ত সমবায়ের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা সভাধিপতি অমলেন্দু দাসের পিতা স্বর্গীয় অমরধন দাস।তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে আজকের কুমারঘাট প্রাইমারি মার্কেটিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।তিনি বলেন রাজ্যের বুকে ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করে চলেছে কুমারঘাট কোপারেটিভ সোসাইটি।যার তত্ত্বাবধানে ৩১ টি প্যাক্স এবং ল্যাম্পস কাজ করে চলেছে।সমবায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন কুমারঘাট কোপারেটিভ সোসাইটি থেকে পরামর্শ নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।১৯০৪ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষের সমবায় আন্দোলনের জন্ম লাভের পরবর্তী ৫৩ বছর পর ত্রিপুরার অভিভক্ত কৈলাসহর মহকুমার তৎকালীন দূরদর্শী সম্পন্ন ব্যক্তিরা একত্রে মিলিত হয়ে একটি বিপণন সমবায় সমিতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মহাজনদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে একটি শোষন মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।উদ্দেশ্যের আরো বিভিন্ন দিক হলো প্রত্যন্ত গ্রাম পাহাড়ে গন বন্টন ব্যবস্থা চালু করা,সমবায় বিপণন বাজার নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী দায়িত্ব পালন করবে,কৃষির উপকরণের যোগান সঠিকভাবে হবে ইত্যাদির বিভিন্ন দিক চিন্তা করে তৎকালীন সমবায়ীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৫৭ সালের ৩০শে ডিসেম্বর কৈলাসহর প্রাইমারি মার্কেটিং সোসাইটি লিঃ নামে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন হয়।পরবর্তী সময়ে কুমারঘাট মহাকুমা হওয়ার পর বিগত ২০১৪ সালে সোসাইটি তার উপবিধি পরিবর্তন করে কুমারঘাট প্রাইমারি মার্কেটিং কোপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর নামে নামকরণ করা হয়।সমবায় আন্দোলন করার ক্ষেত্রে তার কার্য পদ্ধতির সঙ্গে ব্যবসায়ী কার্য পদ্ধতির সংঘাত হতে পারে তখন যাতে সমবায়ীরা পিছিয়ে না পড়েন তার জন্য পেশাদারী কে শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে,ত্যাগ ছাড়া যেমন কোন আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারে না,তেমনি সমবায় আন্দোলনও ত্যাগ ছাড়া সফলতা লাভ করতে পারবে না।কারণ এই আন্দোলনটি মিছিল মিটিং ইত্যাদির আন্দোলন নয়।এটা হচ্ছে মানুষের তথা সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের আন্দোলন।এখানে রেডিমেডের কোন স্থান নেই। নিচ তলার সিঁড়ি বেয়ে উপর তলায় উঠতে হবে।ডিরেক্ট লিফটিং এর কোন ব্যবস্থা নেই।সরকার সোসাইটির বাড়ি অফিস ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা করে দেবে তা সমবায় সমিতিতে প্রযোজ্য না।এটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকার সমিতি গুলোকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে।বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক ভগবান দাস বলেন পূর্বতন বাম সরকারের নিয়ত ভালো ছিল না তাই তাদের সমবায়ের নীতিও মানুষকে সফলতা এনে দিতে পারেনি।বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার মাধ্যমে উন্নত ভারতের গ্যারান্টি দিতে পেরেছেন কারণ নিয়ত সঠিক রয়েছে।তিনি বলেন যে কৃষক মাঠে থাকার কথা তাকে রাস্তায় এনে রাজনীতি করাতো বাম সরকার।মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার।তার জন্য সকলকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে এগিয়ে কাজ করার কথা বলেন বিধায়ক শ্রী দাস।সমৃদ্ধ ভারত গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীজি।যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অন্তিম ব্যক্তি অব্দি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বিশ্বকর্মা যোজনা সম্পর্কেও বিশদভাবে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন ২০১৮ সালের সরকার পরিবর্তন না হলে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত।বর্তমানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মাধ্যমে দীক্ষিত ভারত সংকল্প যাত্রায় অসংখ্য প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তিম ব্যক্তি অব্দি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন পূর্বতন বাম সরকার সমবায় সদস্যদের নিয়ে রাজনৈতিক লাভের সংগ্রাম করত।আর এখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নের সংগ্রাম হচ্ছে কোন মিছিল মিটিং ছাড়াই।সম্প্রতি কুমারঘাটে এআরসিএস অফিসের যাত্রা শুরু হয়েছে।যার ফলে এখন আর কাউকে আগরতলা গিয়ে কোন কাজ করতে হয় না।কুমারঘাটে বসেই সকল ধরনের কাজ অনায়াসে করে নিতে পারেন।তাছাড়া তিনি বলেন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর পৃথক সমবায় মন্ত্রণালয় স্থাপন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর সমবায়ের জোয়ার এসেছে ২০২১ সালে পৃথক সমবায় মন্ত্রণালয় স্থাপনের মাধ্যমে।অনুষ্ঠান শেষে আগত সকল সমবায় সদস্যদের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
132