প্রতিনিধি,গন্ডাছড়া ২৮ এপ্রিল:- ধলাই জেলার প্রত্যন্ত গন্ডাছড়া মহকুমার নারায়নপুর দেবনাথ পাড়ার এক ছোট্ট প্রাণপ্রেমী অর্ণব দেবনাথ আজ শোকাহত। ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখির প্রতি অর্ণবের অগাধ ভালোবাসা ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই কিশোর এখন পর্যন্ত অসংখ্য পশু ও পাখি লালন-পালন করেছে। তার সংগ্রহে ছিল টিয়া, ময়না, অস্ট্রেলিয়ান বাজিস পাখি, ফিঞ্চ, বুলবুলি, চড়ুই, শালিক, বিড়াল, কবুতর, হাঁস ও মুরগির মতো বিভিন্ন প্রাণী। খাঁচাবন্দি পশুপাখিদের প্রতি মমতা দেখিয়ে অর্ণব অনেক সময় নিজের জমানো টাকায় আগরতলা থেকে এক হাজার, দুই হাজার, এমনকি তিন হাজার টাকায় পাখি কিনে এনে লালন-পালন করত।কিন্তু অর্ণবের মন সব সময় একটাই কথা ভাবত — “এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে।” সেই ভাবনা থেকেই সে প্রতি বছর ২৩ আগস্ট, নিজের জন্মদিনে খাঁচার দরজা খুলে পাখিদের মুক্ত করে দিত। তার বিশ্বাস, বছরের পর বছর খাঁচায় বন্দি রেখে প্রাণীদের স্বাধীনতা হরণ করা পাপের সমান। তাই বিশেষ দিনে সে পাখিদের মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পেত।
সম্প্রতি অর্ণব তার বাবা-মায়ের সাথে আগরতলা গিয়ে বিদুরকর্তা চৌমুহনী টিবিএস শোরুম সংলগ্ন মা সন্তোষী একুয়া পেট শপ থেকে দুটি অস্ট্রেলিয়ান বাজিস পাখি কিনে আনে। বাড়িতে এনে যথারীতি ভালোবাসা আর যত্নে পাখিগুলোর পরিচর্যা করছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটি পাখি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিন দিন ধরে পাখিটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। রবিবার দিন অর্ণব অসুস্থ পাখিটিকে নিয়ে দ্রুত আগরতলায় পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ এনে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হয় পাখিটিকে সুস্থ করার।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার সকালে, অর্ণব স্কুলে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তার আদরের বাজিস পাখিটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নিজের প্রিয় পাখির মৃত্যু দেখে অর্ণব কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে, অশ্রুসজল চোখে সে স্কুলে চলে যায়। যাওয়ার আগে মা,বাবা এবং ঠাকুরমা’কে বলে যায়, স্কুল থেকে ফিরে এসে প্রিয় পাখিটির সৎকার করবে।
স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে, দুপুর দু’টার দিকে হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বাড়ির পাশে একটি বিশাল গর্ত খুঁড়ে প্রিয় বাজিস পাখিটিকে শ্রদ্ধাভরে সমাধিস্থ করে। পাখির মরদেহ ফুল দিয়ে সাজিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সেদিন শুধু অর্ণব নয়, গোটা দেবনাথ পরিবার শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। ছোট্ট একটি প্রাণের অকাল মৃত্যুর যন্ত্রণা তাদের চোখেমুখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অর্ণবের এই নিরহংকার পশুপ্রেম এবং প্রাণীর প্রতি গভীর সম্মান সত্যিই আজকের সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতটুকু বয়সে সে যা উপলব্ধি করতে পেরেছে, তা অনেক বড়রাও প্রায়ই বুঝতে ব্যর্থ হয়। প্রতিটি প্রাণীর স্বাধীনতার জন্য তার ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
বাজিস পাখির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গন্ডাছড়ার পশুপ্রেমী অর্ণব দেবনাথ
199