প্রতিনিধি, বিশালগড় , ১৩ নভেম্বর।। পশুপক্ষীর সঙ্গে সংস্কৃতিগতভাবে ভারতীয়দের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। সকল দেব-দেবী কোন না কোন পশু পক্ষীকে বাহন হিসেবে রাখতেন। আজও দেব দেবীর সঙ্গে পশু পক্ষীর পূজা করে সনাতনীরা। শুধু পশু পক্ষী নয় ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশ্বাসীরা প্রকৃতির প্রেমীও বটে। পশু পক্ষীর পাশাপাশি নদী এবং বৃক্ষরতার পূজাও হয় এই ভারতীয় উপমহাদেশে। এক সময় বনের ভয়ংকর পশুকে পোষ মানিয়ে লালনপালন করার ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। আজ মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে বনের অবলুপ্তি ঘটছে। পশু পাখিরা স্থান পাচ্ছে চিড়িয়াখানায়। সরকার চিড়িয়াখানায় অবস্থানরত পশু পাখিদের দত্তক দেওয়ার আইনি অধিকার দিয়েছে পশুপ্রেমীদের। ২০১৯ সালে ভারত সরকারের এই আইন ত্রিপুরায় লাগু হলেও কেউ দত্তক নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেননি। এক্ষেত্রে অনন্য নজির তৈরি করলেন বিশালগড়ের তরুণ বিধায়ক সুশান্ত দেব । নিজের জন্মদিনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দত্তক নিলেন বিধায়ক সুশান্ত দেব। রাজ্যের ইতিহাসে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বুধবার ছিল বিধায়কের জন্মদিন। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ টা ছুঁতেই বিধায়কের শুভাকাঙ্ক্ষীরা জন্মদিন পালন শুরু করে। বুধবার দিনভর কেউ বাড়িতে গিয়ে কেউ মোবাইলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বিকালে সময় কাটিয়েছেন শিশু আবাসে। সন্ধ্যায় কেক কাটার ধুম লাগে। দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে উদ্ভাবনী ভাবনায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। গতবছর সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে দু’টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আনা হয়েছিল। এদের একজনের নাম তৈজল অন্যজন হলেন শেরা । পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার “শেরা” কে দত্তক নিয়েছেন বিধায়ক সুশান্ত দেব। আগামী তিন মাসের খাবার চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য দপ্তরের খাতায় জমা দিতে হয়েছে এক লক্ষ তিরানব্বই হাজার টাকা। বুধবার দুপুরে চিড়িয়াখানার টাইগার এনক্লোজারের গেইটে দত্তকের মঞ্জুরীপত্র বিধায়কের হাতে তুলে দেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা বিশ্বজিৎ দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। বিধায়ক সুশান্ত দেব জানান পশু পক্ষী বৃক্ষলতা অর্থাৎ প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক কাজ বরাবরই উনি করে থাকেন। সেই ভাবনা থেকেই কিছুদিন আগে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দত্তকের জন্য দপ্তরের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। গতকাল সেই আবেদন মঞ্জুর করে দপ্তর। এ প্রকৃতিকে রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা বিশ্বজিৎ দাস জানান চিড়িয়াখানার পশু পক্ষি দত্তক দেওয়ার আইন রয়েছে। তবে এই রাজ্যে প্রথম কোন ব্যক্তি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দত্তক নিয়েছেন। এর জন্য তিনি বিধায়ক সুশান্ত দেব কে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো জানান ভারত সরকার প্রতিটি অভয়ারণ্যকে সচ্ছল স্বনির্ভর এবং সুন্দর করার কাজ করছে। সিপাহীজলা অভয়ারণ্য নতুনভাবে সেজে উঠেছে। নতুন পশু পক্ষীর আগমন সহ পর্যটকদের বিনোদনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। জাতীয় সড়কের পাশে মূল ফটক থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে । সবুজে ভরা চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সেলফি পয়েন্ট সহ বিনোদনের যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
29
previous post