Home » শ্রমিক শোষণের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে ধর্মনগরের ভারতীয় খাদ্য গুদামে কর্মরত শ্রমিকদের উপর।

শ্রমিক শোষণের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে ধর্মনগরের ভারতীয় খাদ্য গুদামে কর্মরত শ্রমিকদের উপর।

by admin

ধর্মনগর প্রতিনিধি।
শ্রমিক নির্যাতনের চূড়ান্ত রূপ চলছে ধর্মনগরের ভারতীয় খাদ্য গুদামে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। ৫৩ জন শ্রমিকে এখানে দিনরাত উপেক্ষা করে কাজ করে চলেছে। প্রত্যেকে ই অস্থায়ী কন্টাক্ট বেস শ্রমিক। ২০০৬ সাল থেকে এরা এখানে কর্মরত। ২০১৮ তে তারা কন্টাক্টে স্বাক্ষর করে এবং ২০২২ এ পুনরায় কন্টাক্ট এ স্বাক্ষর করে। এখন ন্যায্য পাওনা না পাওয়ার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীরা। তারা ইতিমধ্যে ত্রিপুরা হাইকোর্টে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে মামলা রিজু করেছে। জানা গেছে ২০১৮ তে শ্রমিকদের পরিচালনার কন্টাক্টটি পায় জনি ওবেরয়। আর ধর্মনগরের ভারতীয় খাদ্য গুদামের শ্রমিকদের সর্দার এবং জনি ওবেরয়ের কাজ করে চলেছে রজত নন্দী ওরফে রুপু নন্দী। রজত নন্দির সাথে তিন নম্বর গেংয়ের লেবার সর্দার দীপক কুমার সিংয়ের হৃদ্যতা থাকায় এই দুজন মিলে অস্থায়ী ভারতীয় খাদ্য প্রদানের শ্রমিকদের দিনের পর দিন ঠগিয়ে চলেছে। পুরোনোদের উপেক্ষা করে রজত নন্দী নিজের ইচ্ছামত কয়েকজনকে নতুন করে কাজে নিয়ে আসছে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নিজের কমিশনটা বুঝে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে। দৈনিক মজুরি ৬৬৩ টাকা করে থাকলেও তাদেরকে প্রথমে দেওয়া হতো প্রতি বস্তা তিন টাকা করে, কিছুদিন পর তা বাড়িয়ে করা হলো চার টাকা ৬০ পয়সা করে। এখন বস্তা প্রতি চার টাকা ৮০ পয়সা করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন কখনো কখনো ২০ থেকে ২২ হাজার বস্তা লোডিং আনলোডিং হচ্ছে। অ্যাটেনডেন্সের খাতা দেখলে দেখা যায় যে একই সাথে কাজ করা রজত নন্দীর মাসে যদি ১৮ দিন কাজের হাজিরা থাকে অন্যান্যদের সাত থেকে আট দিন কারোর কারোর খাতায় কোন হাজিরা নেই। অর্থাৎ শ্রমিকদের টাকার লুটতরাজ চলছে এখানে দীর্ঘদিন ধরে। কিছুদিন আগে শ্রীধর সাহানিকে বাদ দিয়ে অশোক সহানিকে হঠাৎ করে কাজে ঢুকানো কে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী সময় উত্তর জেলা বিএমএস এর সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাস এবং সভাপতি সুব্রত রুদ্র পালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নিয়েও নয় ছয়ের অভিযোগ উঠে এসেছে। ২০০৬ সাল থেকে কাজ করে আসা শ্রমিক মিলন মালাকার জানান এতদিন যাবত প্রভিডেন্ট ফান্ডে তার জমাকৃত টাকা তুলতে গেলে দেখা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে তার এবং বেশ কিছু শ্রমিকের জন্ম তারিখে ভুল লিখে তাদেরকে তাদের নিজের জমানো টাকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেউ এই টাকার জন্য মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না, আবার কেউ অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা করাতে পারছে না। কিছু বললে রজত নন্দী নাকি বলে এই সব ঠিক হয়ে যাবে, দরকারে সব শ্রমিকরা চাঁদা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে দেবে। এখন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন শ্রমিকরা তাদের জমানো টাকা পাবে না অন্যের দয়ায় সমস্যার সমাধান করতে হবে। সরকারি সার্কুলারে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত তাদের ডিউটি দেওয়ার কথা ।সেখানে সকাল আটটা থেকে রাত এগারোটা বারোটা, কখনো কখনো সারারাত কাজ করে ও প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভারতীয় খাদ্য গুদামের অস্থায়ী শ্রমিকরা। আরো জানা গেছে, রজত নন্দীর কারণে স্থানীয় ঠিকাদারেরা টেন্ডার দাখিল করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে রজত নন্দী শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি খেলতে শুরু করেছে। একদিকে দিনরাত পরিশ্রম করে যখন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের বেহাল অবস্থা তখন তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে তাদের টাকায় আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত কিছু সংখ্যক সর্দার রজত নন্দী এবং দীপক কুমার সিং এর মত শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের এহেন দুঃখ কষ্টের কাহিনী তুলে ধরল মিলন মালাকার, মাতাব হোসেন এবং রূপক পালের মত দিনের পর দিন নির্যাতিত দিশেহারা শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবি আদায়ে এবং প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। তারা সময়ের সময়ে গণধরনায় বসছে। যে কোন সময় লাগাতর ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়ে খাদ্য গুদামের সাপ্লাই পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

You may also like

Leave a Comment