
প্রতিনিধি কৈলাসহর:-আজ মঙ্গলবার ডলুঁগাও দ্ধাদশ শ্রেনী বিদ্যালয়ে রবিবাবু সিংহ স্মৃতি ট্রাস্ট থেকে ফি বছর ও ঊনকোটি জেলার(মাধ্যমিক ও দ্বাদশ ৪টি) এবং ডলুগাঁও দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়,(নবম ও একাদশ দুইটি) সর্বোচ্চ কৃতিদের পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত শিক্ষকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলী এবং নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক তাপস দত্ত চৌধুরী।এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলাভিত্তিক তিন জনকে এবং বিদ্যালয় ভিত্তিক চারজন কৃতি ছাত্র-ছাত্রীকে সম্মানিত করা হয়।মাধ্যমিক পরীক্ষায় যুগ্ম প্রথম স্থানাধিকারী শিশু নিকেতন স্কুল থেকে শতদল রায় এবং ধনসিংহ মেমোরিয়াল কাঞ্চনবাড়ি স্কুল থেকে ঝুমন মজুমদারকে সম্মানিত করা হয়।অনুরূপভাবে,দ্বাদশ শ্রেণী থেকে ধনসিংহ মেমোরিয়াল কাঞ্চনবাড়ি স্কুল থেকে রাজদীপ ভৌমিককে সর্বোচ্চ মার্কের জন্য সম্মানিত করা হয়।পাশাপাশি ডলুগাও দ্ধাদশ শ্রেনী বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় ভিত্তিক নবম শ্রেণী থেকে অঙ্কিতা সিনহা,একাদশ শ্রেণী থেকে পিযুষ দেবনাথ, মাধ্যমিক থেকে আয়ুষ্মিতা দাস এবং দ্বাদশ শ্রেণী থেকে তাপশ্রী দে’কে সম্মানিত করা হয়।আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে রবিবাবু সিংহ স্মৃতি ট্রাস্টের মাধ্যমে ২৭ হাজার টাকা নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে।এই কর্মসূচি ২০২০ সাল থেকে ট্রাস্ট এর মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে চলে আসছে এবং আগামী দিনে তা বৃহৎ আকারে আয়োজন করা হবে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।এখানে উল্লেখ্য যে,৫০ এর দশকে মা-বাবা এবং বড় ভাইদের হাত ধরে ওপার বাংলা থেকে সর্বহারা হয়ে এদেশে আসেন।এই ছিন্নমূল পরিবার থেকে অনাহার অর্ধাহারে শৈশব থেকে মহাবিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রতিবেশী তথা শিক্ষানুরাগী হিতার্থীদের অকৃত্রিম সহায়তায় জীবনের ধাপ গুলো পেরিয়ে এসেছিলেন প্রয়াত স্বনামধন্য শিক্ষক সাহিত্যিক তথা বিশিষ্ট বাগ্মী পন্ডিত রবি বাবু সিংহ।স্বল্প পরিসরে উনার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় যে,তৎকালীন সময়ে বিএ পাস করার পর রবিবাবু সিংহ তদানীন্তন শিক্ষা অধিকর্তা জে এন চ্যাটার্জির সাথে দেখা করার পরে অধিকর্তা বলেছিলেন সংস্কৃত উপাধি নিয়ে যদি আসতে পারো তবেই চাকরি দেব।সে সময় তিনি ফিরে এসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় নিয়ে কাব্যে কাব্যতীর্থ উপাধীর শংসাপত্র হাতে নিয়ে শিক্ষা অধিকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন এবং কাঞ্চনবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্ল্যাসিকেল টিচার হিসাবে যোগদান করেন।সে সময় তিনি ৩৭০ টাকার বেতন নিয়েই পরবর্তী সময়ে সংস্কৃতে অনার্স ও ব্যাকারন তীর্থ এবং গীতারত্ন প্রথম শ্রেণীতে সাফল্যের সহিত কৃতকার্য হন। কাঞ্চনবাড়ি বিদ্যালয়ে ১০ বৎসর শিক্ষকতা করার পর ডলুগাঁও দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে আসেন এবং ২০০৭ সালে এই বিদ্যালয় থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।প্রয়াত শিক্ষক রবিবাবু সিংহ শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে গীতা পাঠ থেকে শুরু করে শাস্ত্র আলোচনায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।এ রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে তিনি আসামের কাছার এবং বাংলাদেশেও পাঠক হিসেবে যথেষ্ট প্রশংসা এবং প্রচুর মানপত্র অর্জন করেছেন। অবসরকালীন সময়ে তিনি রবীন্দ্র নৃত্যে মণিপুরী প্রভাব সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘মণিপুরী ও রবীন্দ্রনাথ’ রচনা করেন।উনার প্রকাশিত এই বইটি তৎকালীন ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ সম্মানের সাথে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।চুড়াইবাড়ি থেকে সাব্রুম এর মনু বনকুলেও উনার বইটি আজও লাইব্রেরীতে শুধুই পাঠক পাঠিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা বুকে আগলে রেখেছেন।২০১৮ সালের ১লা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে বিশিষ্ট লেখক ও কবি হিসেবে তৎকালীন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রবিবাবু সিংহকে বয়োশ্রেষ্ট সম্মানে ভূষিত করেন।এই স্বনামধন্য ব্যক্তি তথা রাজ্যের গৌরব প্রকৃতির নিয়মেই ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেন্বর প্রয়াত হন।প্রয়াত রবিবাবু সিংহের সহধর্মিনী,পদ্মাবতীর সিনহা এবং ওনার সুযোগ্য সন্তান দেবাশীষ সিনহা এবং শুভাশিস সিনহা পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্য রবিবাবু সিংহ স্মৃতি ট্রাস্ট গঠন করে দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষা অধিকতা এবং জেলাশাসক ও সমাহর্তার অনুমোদনক্রমে ৬ লক্ষ টাকা দান করেছেন। উক্ত জমাকৃত অর্থের প্রাপ্য সুদ থেকে প্রতিবছর এই নগদ অর্থ এবং শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করা হয় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের।আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর অফ স্কুল বেনী মাধব চক্রবর্ত…