ধর্মনগর প্রতিনিধি
ত্রিপুরার রাজ্যের মধ্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার জম্পুই পাহাড়কে রাজ্যের শৈল শহর বলা হয়। একসময়ে রাজ্যের পাশাপাশি দেশের মধ্যে সুস্বাদু কমলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছিল এই শৈল শহর জম্পুই পাহাড়। কমলা উৎপাদনের সুনাম ছড়িয়ে পড়তেই সুস্বাদু কমলার স্বাদ্ নিতে কিংবা অনেকেই আবার কমলার বাগান দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এই জম্পুই পাহাড়ে পরিযায়ী পাখির মতো কমলা মরশুমে ভিড় জমাতে । পর্যটকদের কাছে জম্পুই পাহাড়ের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য এক সময় কমলা চাষী ও ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় যাকযমক ভাবে কমলা উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু সময়ের গতিতে কমলা উৎপাদন হ্রাস পায় জম্পুই পাহাড়ে।প্রকৃতি বিমুখ হওয়ার কারণে নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমশ জম্পুই এর কমলা বাগানে রোগ আক্রমনে ফলে কমলা উৎপাদন তলানিতে চলে যায়। রাজ্যের কৃষি বিজ্ঞানী এমনকি দেশ-বিদেশের বহু বিজ্ঞানীরা কমলা গাছের রোগ নির্ণয়ের জন্য বহু পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বার বার চেষ্টা করেও কমলা গাছের রোগ প্রতিরোধ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। বছরের পর বছর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর ও তারা বিফল হন। ফলে যত দিন গড়িয়েছে জম্পুই এর কমলা উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সেই সাথে কমলা উৎপাদনকারী চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে কমলা চাষ থেকে সরে যান। পরবর্তীতে চাষীরা কমলা চাষের বিকল্প হিসেবে আদা,সুপারি ও কফি উৎপাদন শুরু করেন। যার কারণে দেখা গেছে কমলা উৎপাদনকারী হিসেবে জম্পুই পাহাড়ের উজ্জ্বল সুনাম দেশের মান চিত্র থেকে প্রায় মুছে যায়।কিন্তু কিছু সংখ্যক জম্পুইয়ের কমলা চাষী কমলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে হাল ছাড়েননি। ফলে প্রতিবছরই দেখা গেছে জম্পুই পাহাড়ে কোন কোন গ্ৰামে কিছু কিছু কমলা বাগানে স্বল্প সংখ্যক কমলার ফলন হয়েছে।তাই দীর্ঘ দশকের পর দশক ধরে কমলা উৎপাদনে জম্পুই পাহাড়ের এই সুনাম সারা দেশ এবং বিদেশের ছড়িয়ে পড়েছিল ।পর্যটকরা কমলা উৎপাদন না হলেও নভেম্বর ডিসেম্বর মাস থেকে জম্পুই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম আবহাওয়া উপভোগ করতে ভীড় জমান এখনও। অবশেষে কমলা চাষীদের দুহাত তুলে আশির্বাদ দিল প্রকৃতি। চাষীদের বক্তব্য এই বছর ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ার ফলে প্রকৃতি কিছু টা জম্পুই পাহাড়ের কমলা চাষীদের প্রতি সদয় হয়েছে। ইতিমধ্যে জম্পুই পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী শাখান পাহাড়ের কমলা চাষীদের কমলা বাজারজাত হতে শুরু করেছে।এখনো শীতের দেখা নেই।তবে শারদোৎসবের প্রাক্কালে শীতের মরশুমী সুমিষ্ট রসালো জম্পুই হিল এবং শাখান-শেরমুন পাহাড়ের বিখ্যাত কমলা এসে গেছে কাঞ্চনপুর বাজারে। শীতের মরশুমী ফল কমলা আগাম বাজাররত হওয়ায় খুশি ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতারাও।কাঞ্চনপুর মহকুমা বাজারে ৪টি পাকা কমলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দামে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য এবছর জম্পুই হিল এবং শাখান শেরমুন পাহাড়ে কমলার ফলন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চলতি বছরে আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসব এবং ভ্রমনের মরশুমে রাজ্য ও বহিঃরাজ্য থেকে জম্পুই হিলে আসা পর্যটকদের সুস্বাদু কমলার চাহিদা পূরণে বাড়তি আনন্দ যোগাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই দশক যাবত জম্পুই পাহাড়ের কমলা না হলেও কাঞ্চনপুর মহকুমার শাকান পাহাড়ের উৎপাদিত কমলা লেবুর অনেকটা কমলার চাহিদা মিটিয়েছে । জম্পুই পাহাড়ের উৎপাদিত কমলা লেবুর তুলনায় শাকান পাহাড়ের উৎপাদিত কমলা লেবুর স্বাদ ততটা না হলেও কমলা লেবুর চাহিদার যোগান দিয়েছে সফল ভাবেই। কিন্তু চলতি বছর জম্পুই পাহাড়ের কমলা উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এদিকে এক সময় খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দুর্গম পাহাড়ে চড়াই উৎরাই সড়ক বেরিয়ে পর্যটকদের জম্পুই পাহাড়ে যেতে হতো। বর্তমানে জম্পুই পাহাড়ের পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য বিশাল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য সরকারী যাত্রী নিবাসের পাশাপাশি বর্তমানে অনেক বেসরকারি পর্যটন নিবাস গড়ে উঠেছে। যার ফলে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে জম্পুই পাহাড়ের সুস্বাদু কমলা নেবু স্বাদ্ ,পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরোগ আবহাওয়ার উপভোগ করে বাড়ি ফিরছেন সহজেই ।তাই বর্তমানে মৌসুমের শুরুতেই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটরদের ভিড়ে উৎসবের মেজাজে সেজে উঠে রাজ্যের একমাত্র শৈল শহর জম্পুই পাহাড়।
জম্পুই পাহাড়ে পরিযায়ী পাখির মতো কমলা মরশুমে ভিড়
71
previous post