গণতন্ত্র প্রশ্নে লন্ডনে করা মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে আজও অনড় বিজেপি। উপরন্তু রাহুলের সমর্থনে যে সাংসদেরা লোকসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁদের সাসপেন্ড করার জন্য স্পিকারের কাছে সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। রাহুল আজ দেশে ফিরেছেন। কাল তাঁর লোকসভায় উপস্থিত থাকার কথা। তা হলে শাসক শিবিরের সুর যে আরও তীব্র হবে তা স্পষ্ট। অন্য দিকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে সংসদের অধিবেশন বানচাল করতে সক্রিয় রয়েছে শাসক দল।
আজ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে স্পিকার ওম বিড়লা লোকসভায় বলেন, ‘‘সংসদের ভিতর ও বাইরে যাতে সংসদ নিয়ে কোনও ধরনের সমালোচনা না করা হয় সে দিকে আপনাদের (সাংসদদের) নজর দেওয়া উচিত।’’ ওয়েলে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভরত সাংসদদের উদ্দেশেও বলেন, ‘‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, কক্ষ প্ল্যাকার্ড দেখানোর জন্য নয়। সংসদ হল আলোচনার জায়গা।’’
আজ লোকসভায় কংগ্রেসকে আক্রমণের দায়িত্ব নেন রাজ্যসভার দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ। তিনি বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি বিষয়। সংসদের এক জন সদস্য বিদেশে গিয়ে ভারতের সংসদকে অপমান করেছেন। যত দিন উনি (রাহুল) ক্ষমা না চাইবেন, তত দিন এঁদেরও (যাঁরা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করছেন) দায়বদ্ধ করা হোক। যদি এঁদের (রাহুলের মন্তব্য) অপমানজনক মনে না হয় এবং এ ধরনের আচরণ চালিয়ে যান, তাহলে আমার মতে যাঁরা প্ল্যাকার্ড এনেছেন তাঁদের সাসপেন্ড করা হোক।’’ স্পিকার অবশ্য পীযূষের ওই আবেদন প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করেই, বিরোধীদের কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অধিবেশন মুলতুবি করে দেন। বিজেপি সূত্রের মতে, এ যাত্রায় কোনও ভাবেই রাহুলকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাতে অধিবেশন যদি এক দিনও না চলে, সেই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত রয়েছে দল। রাজনীতির অনেকের মতে, রাহুলের ক্ষমা না চাওয়া রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির পক্ষে স্বস্তিদায়ক। কারণ দাবি মেনে রাহুল ক্ষমা চাইলে সে ক্ষেত্রে সংসদ চালাতে বাধ্য হবে সরকার। হবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা। সেই আলোচনায় বিরোধীরা যে কোনও ছুতোনাতায় আদানি সংস্থার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সুসম্পর্ক নিয়ে সরব হবেন। তাই শাসক শিবির চাইছে অচলাবস্থা জারি থাকুক।
আজ স্পিকারের কাছে কতকটা সেই অভিযোগে সরব হয়েছেন অধীর চৌধুরী। তিনি তাঁর চিঠিতে স্পিকারকে লিখেছেন, ‘‘বর্তমানে সংসদে যে অচলাবস্থা জারি হয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে শাসক দল অধিবেশন বানচাল করতে সক্রিয় রয়েছে। শাসক দল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পরিকল্পিত ভাবে রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে তৎপর।’’ বিরোধীদের কথা না শোনার অভিযোগ করে অধীর বলেন, ‘‘আমার সামনের মাইক গত তিন দিন ধরে বন্ধ। ফলে রাহুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার জবাব দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাহুলের অভিযোগ যে সত্য, তা এতেই প্রমাণিত।’’