প্রতিনিধি, গন্ডাছড়া :- ইচ্ছা শক্তির কাছে স্বপ্ন পূরণ করা নিশ্চিত সম্ভব। ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। কোন বাধাই স্বপ্ন পূরণ ঠেকাতে পারে না। এমনি একটি ঘটনা ধলাই জেলার প্রত্যন্ত গন্ডাছড়া মহকুমার নারায়নপুর এডিসি ভিলেজের মগ পাড়ার বাসিন্দা তথা অটোচালক মঙ্গল মগের পরিবারে। তার চার মেয়ে এক ছেলে সহ তাদের সাতজনের পরিবার। ছোট মেয়ে সোনা উং মগ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রচলিত ২০২৩ ইং সনের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ স্মৃতি বিদ্যাভবন দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে ৩৬২ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এরপর রাজস্থানের কোটায় কোচিংয়ে ভর্তির জন্য গত জুন মাসে সুপার থার্টি পরীক্ষায় বসে। সুপার থার্টি পরীক্ষায় মহকুমা এলাকার ১৪ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একমাত্র সে চান্স পায়। এই খবরে তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। মেয়ের এই ভালো ফলাফলে মা নিউ চাং মগ চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। তিনি জানান তার এক মেয়ে আগরতলায় অংক অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে, আর এক মেয়ে নবোদয়, একমাত্র ছেলে গন্ডাছড়া সেন্ট আর্নল্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আবার ছোট মেয়েকে কিভাবে রাজস্থান পাঠাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। যদিও সরকারি খরচে সেখানে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার আসা যাওয়ার খরচ কিভাবে জোগাড় করবে এই নিয়ে তার মা বাবা চিন্তায় আছেন। তার বাবা মঙ্গল মগ একজন অটো চালক। অটো চালিয়ে যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে কোনক্রমে সংসার চলে। এর উপর ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এমত অবস্থায় বাড়ির জায়গার কাগজপত্র দিয়ে লোনের জন্য ব্যাংকের দরজায় দরজায় ঘুরেও লোন পাচ্ছে না। ব্যাংক থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয় সরকারি কর্মচারীর গ্যারান্টার ছাড়া লোন দেওয়া যাবে না। হতদরিদ্র জনজাতি এই পরিবারটি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়ে। কোথায় গেলে যে লোন পাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না। মা নিউ চাং মগ আরো জানান কিভাবে যে তাদের সংসার চলে কেউ জানে না, একমাত্র ভগবান জানে। এত অভাবের মাঝেও মা তার মেধাবী সন্তানদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। আর বলছেন তোমরা ভাল করে পড়াশুনা কর, আমি রক্ত বেঁচে হলেও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাব। এখন দেখার সংবাদ প্রকাশের পর এই অসহায় জনজাতি পরিবারের মেধাবী ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য লোনের ব্যবস্থা হয় কিনা তার দিকে তাকিয়ে আছেন গোটা পরিবারের লোকজন।
120
next post