তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধি :–
সুশাসনের রাজ্যে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে গ্রামবাসীর আর্থিক সহায়তায় ভর করে কোন মতে সন্তান জন্ম দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না। একপ্রকার উপবাস আর অপুষ্টির যুগলবন্দিতে বিনা চিকিৎসায় জনজাতি মা সন্তান জন্ম দেওয়ার তিনদিন পর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। চাঞ্চল্যকর এবং উদ্বেগ জনক এই ঘটনা তেলিয়ামুড়া মহকুমার অন্তর্গত স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের অধীন মুঙ্গিয়াগামী আর.ডি ব্লকের অন্তর্গত প্রত্যন্ত কুতনা পাড়া এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,, আজ থেকে কয়েক বছর আগে কুতনা পাড়ার দরিদ্র জনজাতি পরিবারের মেয়ে শক্তিবালা দেববর্মা (৩২) জারুইলং বাড়ি এলাকার হিরন দেববর্মার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। জানা গেছে,,, বিয়ের পর থেকেই চরম দারিদ্রতায় কায়ক্লেসে দিনাতিপাত করছিলেন শক্তিবালা। এরই মধ্যে শক্তিবালা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তবে তাৎপর্যের বিষয় হচ্ছে কেন্দ্র সরকারই হোক আর রাজ্য সরকারই হোক, বরাবর বলার চেষ্টা করছেন নিরাপদ সন্তান প্রসব নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ প্রকল্প রয়েছে সরকারের। বরাবর স্বাস্থ্য দপ্তর চাইছে যাতে আশা কর্মী সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের তত্ত্বাবধানে যারা দারিদ্রতায় ভুগছেন তাদের সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে বা সন্তান প্রসবের পূর্বে কিংবা প্রসবের পর যাতে কোন সমস্যা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে দপ্তরের তীক্ষ্ণ নজর থাকে। তবে আজকের এই ঘটনা আশা কর্মী এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতা প্রকাশ করছে।
বিগত প্রায় দু সপ্তাহ পূর্বে কোন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে শক্তিমালার প্রসবের সময় নিকটে আশায় শক্তিমালাকে তার শ্বশুরবাড়ি জারুইলং বাড়ি থেকে তার বাপের বাড়ি কুতনা পাড়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে শক্তিবালার পরিবার সূত্রে। প্রাক প্রসব মুহূর্তে শক্তিবালাকে পুষ্টিকর খাবার যোগানো দূরের কথা, দুবেলা তার মুখে ভাত তুলে দেবার পর্যন্ত সামর্থ নেই শক্তিবালার বৃদ্ধ বাবা মায়ের। এই অবস্থায় কোনক্রমে একবেলা খেয়ে না খেয়ে গত তিনদিন পূর্বে নিজ বাবার বাড়িতেই শক্তিবালা একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এরপর এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত ১,০০০ টাকা সাহায্যকে পুঁজি করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে প্রসব পর চিকিৎসা করায় শক্তিবালা। যথারীতি শক্তিবালা তার কন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই ছিল। গতকাল রাতের দিকে দুর্বলতার কারণে এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ে বিনা চিকিৎসার কারণে অধিক রক্তক্ষরণ হতে হতে একটা সময় শক্তিবালা তার তিন দিনের বাচ্চাকে রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই হতভাগিনী জনজাতি মায়ের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনাতে এলাকা জুড়ে ব্যাপক শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। হৃদয়বিদারক হলেও এটাই সত্য যে দারিদ্রতার জড়িয়ে এক জনজাতি মাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই বিনা চিকিৎসায় আর খাদ্যাভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে এ কেমন সুশাসন ? এ কেমন সুশাসন! যে সুশাসনে দারিদ্রতার জড়িয়ে জনজাতি মাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই বিনা চিকিৎসায় আর খাদ্যাভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়।
হয়তো আর পাঁচটা মৃত্যুর ঘটনার মতো শক্তিবালার মৃত্যুর ঘটনাটাও চাপা পড়ে যাবে। প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য দপ্তরের কেউ কি একবারের জন্য সন্তান সম্ভবা শক্তিবালার সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার বা প্রসব পূর্ববর্তী বা পরবর্তী অবস্থায় দরিদ্র জনজাতি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ন্যূনতম প্রয়োজন মনে করলো না ?? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন!!
হায় রে সুশাসন! বিনা চিকিৎসায় আর অভাবে সন্তান জন্ম দিয়েই মৃত্যুর কোলে জনজাতি মা!
107
previous post