
কল্যানপুর প্রতিনিধি:
দক্ষিণ ভারতের সামাজিক সংস্থা বেনিয়ানের হাত ধরে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর নিখোঁজ থাকার পর কল্যাণপুর থানাধীন কমলনগর এলাকার ২৩ বছরের কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস আপাতত ফিরে এলো নিজের পরিবারে। ঘটনার বিবরণে জানা যায় কমলনগরের পেশায় দিনমজুর বীরেন্দ্র বিশ্বাসের বড় ছেলে প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বিগত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। মানসিকভাবে অসুস্থ প্রসেনজিৎকে দীর্ঘদিন ধরে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। যদিও জানা গেছে এরও বেশ কিছুদিন আগে মানসিক সমস্যার কারণে প্রসেনজিৎকে বিভিন্ন জায়গায় বাড়ির তরফ থেকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এদিকে দিকবিদিক শূন্য হয়ে ঘুরতে ঘুরতে প্রসেনজিৎ কোনভাবে চেন্নাইয়ে গিয়ে পৌঁছে। তখন বিষয়টা নজরে পড়ে চেন্নাইয়ের ভারত বিখ্যাত সামাজিক সংস্থা বানিয়ানের কর্মকর্তাদের। তারা সেখান থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ কিছু বলতে না পারা প্রসেনজিৎকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট সামাজিক সংস্থার কার্যকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রায় এক বছরের বেশি সময় নিজেদের তত্ত্বাবধানে রেখে প্রসেনজিতের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করেন। এরই মধ্যে প্রসেনজিৎ প্রায় সুস্থ হয়ে উঠলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে তার বাড়ির ঠিকানা মোটামুটি বলতে পারে।
এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দুই কর্মকর্তা মৃন্ময় ঘোষ এবং জ্যোতিষ এম এস কোনভাবে ঠিকানা জোগাড় করে আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক এগারোটার কিছু পরে প্রসেনজিৎকে নিয়ে হাজির হয় কমলনগরের তাদের নিজস্ব বাড়িতে। হঠাৎ করে প্রায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে নিজেদের মাঝে দেখতে পেয়ে প্রসেনজিৎ এর বৃদ্ধ বাবা সহ পরিজনদের চোখ একসময় ছল ছল করে ওঠে। ইত্যবসরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকর্তা মৃন্ময় ঘোষ জানিয়েছেন তারা দীর্ঘ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পরে প্রসেনজিৎকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে পেরে আত্মতৃপ্ত, যদিও তারা দাবি করেছেন প্রসেনজিৎ যেহেতু মানসিকভাবে অসুস্থ তাই তারা প্রসেনজিৎকে ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন না, আগামী দিনেও প্রসেনজিৎ যাতে করে বিনামূল্যে মানসিক চিকিৎসার ঔষধ গুলো গ্রহণ করতে পারেন সেই উদ্যোগ সংস্থার তরফ থেকে করা ইতিমধ্যে হয়েছে বলে শ্রী ঘোষ প্রসেনজিৎ এর পরিবার পরিজনদের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককেও জানিয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর নিজের ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে অসহায় দিনমজুর বৃদ্ধ বাবা বীরেন্দ্র বিশ্বাস বানিয়ান সামাজিক সংস্থার কার্যকরতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। এদিকে যেভাবে দক্ষিণ ভারতের সামাজিক সংস্থার দুই কার্যকর্তা রাজ্যের মানসিকভাবে অসুস্থ একটা ছেলেকে ঠিক ঠিক ভাবে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন সে বিষয়টা জানাজানি হতেই গোটা কমলনগরবসঃ সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে সংস্থার তরফ থেকে মৃন্ময় ঘোষ এবং মিস জ্যোতিষ দাবি করেছেন তাদের সংস্থা দীর্ঘ প্রায় 30 বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে মানুষের পাশে থাকছেন, এতটা দূর, এতটা পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া প্রসেনজিৎকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে পেরে আজ তারা অত্যন্ত তৃপ্ত বলে একসাথে জানিয়েছেন মৃন্ময় ঘোষ এবং মিস জ্যোতিষ।