
প্রতিনিধি কৈলাসহর:-একাংশ লালমার্কা স্বাস্থ্য কর্মীদের অপদার্থতা এবং খামখেয়ালীপনার কারনে ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল আজ কলংকিত।পাশাপাশি কলংকিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে জোট সরকারকেও।ঐ সমস্ত লাল বাড়ির স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য জেলা হাসপাতালের পরিষেবা ক্রমশই তলানিতে যাচ্ছে। একইসাথে একের পর এক অবাঞ্চিত এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা কৈলাসহরের ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ঘটে যাচ্ছে।গত ২৫শে অক্টোবর রাঙ্গাউটি দেবীপুর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজমত আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম হার্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।সুস্থ হোওয়ার পর ডিসচার্জ নিয়ে বাড়িতে চলে আসার সময় রহিমা দেবীকে বিষ খাওয়া পেশেন্টের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেওয়া হয়।রহিমার পাশের বেডেই ভর্তি হয়েছিল বিষ পানের রোগী।আর এই ওষুধ খেয়ে বর্তমানে মরনাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রহিমা।এই ঘটনা নিয়ে কৈলাসহর থানায় মামলা দায়ের করেন রহিমা।এইসব অবাঞ্চিত ঘটনার জন্য সরকারি হাসপাতালের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে,এই ঘটনার এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই পুনরায় জেলা হাসপাতালের এক কর্তব্যরত নার্স মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইন জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে দিয়ে দেয়।শুধু তাই নয়, বোতল ভর্তি সেলাইন রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে চাউর হতেই হাসপাতাল চত্বরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।উল্লেখ্য,কৈলাসহ কাজিরগাঁও এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় পাল পেশায় গৃহশিক্ষক।সঞ্জয় বাবু উনার ৬৫ বছরের মা লক্ষীরানী পালকে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য গত ১লা নভেম্বর ভগবান নগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান।পরের দিন দুসরা নভেম্বর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক লক্ষীরানী পালের হার্নিয়া অপারেশন করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষীরানী পাল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আগামী আরও তিন দিন থাকবেন বলে জানা যায়। সঞ্জয় পাল জানান যে,দুসরা নভেম্বর অপারেশনের পর সারা দিন-রাত উনার মাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছিলো। অনুরূপ ভাবে তেসরা নভেম্বর সারা দিন সেলাইন চলছিলো। তেসরা নভেম্বর বাঁধে বিপত্তি।৩রা নভেম্বর শুক্রবার বিকেল তিনটা নাগাদ দেখতে পান উনার মার শরীরে যে সেলাইনটি চলছে সেই সেলাইনটি প্রায় শেষের পথে। সাথে সাথে হঠাৎ সঞ্জয় বাবু দেখতে পান সেলাইনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।অক্টোবর অব্দি মেয়াদ ছিল।এটা দেখে সাথে সাথেই কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের জানানোর পর স্বাস্থ্য কর্মীরা এসে সেলাইন পাল্টে দেন। মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইনের বোতল নিয়ে যাবার সময় সঞ্জয় বাবু মেয়াদোত্তীর্ণ সেলাইনের বোতলটি নিতে দেন নি এবং বোতলটি নিজের হেফাজতে রেখে দেন। ফেইসবুকের এই লাইভ দেখে চৌঠা নভেম্বর শনিবার কৈলাসহরের স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিরা সঞ্জয় বাবুর সাথে দেখা করলে উনি সমস্ত ঘটনা বিস্তৃত ভাবে জানান এবং এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও এই ঘটনার সাথে যুক্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর নিকট।এব্যাপারে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড: পূর্ণক্রীত দেববর্মার সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান যে,এই ঘটনার ব্যাপারে লিখিত ভাবে কোনো ধরনের অভিযোগ না পেলেও সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাটি শোনে ইতিমধ্যেই উনি সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীদের নাকি সতর্ক করেছেন এবং তদন্তেরও নির্দেশ দেন।তদন্তে গাফিলতি প্রমান হলে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলেও মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট জানান।এদিকে মেডিসিন চিকিৎসকের অভাবে রয়েছে জেলা হাসপাতাল।মেডিকেল সুপার ডাঃ পি দেববর্মা এবং ডঃ তাপস দত্ত দুজনেই রয়েছেন জেলা হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তাপস বাবু প্রতি মাসে ৭-৮ দিন ছুটি কাটিয়ে দু-তিন দিনের জন্য জেলা হাসপাতালে কিছুটা সময় ব্যায় করেন এবং তার পাশাপাশি চেম্বার বাণিজ্যও ঠিক রেখে চলেন।অপরদিকে মেডিকেল সুপার তথা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ পি দেববর্মা সুপারিনটেনডেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি প্রশাসনিক ঝামেলার অজুহাতে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে এক মিনিটের জন্যও রাউন্ড দিতে যান নি।তাহলে কি করে চলছে এই জেলা হাসপাতাল?এদিকে আবার প্রশাসনিক অজুহাতের কারণে মেডিসিন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে না পারলেও চেম্বারের কামাই বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন তিনি। সবমিলিয়ে জম্পেশ কামাই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের দুজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।আর এদিকে তাদের অনুপস্থিতিতে চেস্ট মেডিসিন ডক্টর রাকেশ দাস কে দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রক্সি ভিজিট করানো হচ্ছে।যিনি উক্ত ওয়ার্ডে ভিজিট করার কথাই নয়।এ ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা যে লাঠে উঠবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।এই চলমান ঘটনাবলি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানানো এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আরো সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডক্টর শঙ্খ শুভ্র দেবনাথের বলে,মনে করেন জেলার মানুষ।