Home » সাংবাদিকতার পাশে মানবতা, অসুস্থ রবি সিং-এর পাশে দাঁড়ালেন আরেক সাংবাদিকের মা

সাংবাদিকতার পাশে মানবতা, অসুস্থ রবি সিং-এর পাশে দাঁড়ালেন আরেক সাংবাদিকের মা

by admin
  • প্রতিনিধি,গন্ডাছড়া ৩ জুন:-
    জীবনের চার দশকেরও বেশি সময় সাংবাদিকতা করে বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন গন্ডাছড়া মহকুমা এলাকার সিনিয়র সাংবাদিক রবি সিং। কিন্তু আজ তিনি নিজেই এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ এক বছর ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত এই সিনিয়র সাংবাদিক বর্তমানে শারীরিক এবং আর্থিক—দুই দিক থেকেই বিপর্যস্ত। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যে তার সঞ্চিত দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং বহিরাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি কার্যত নিঃস্ব।
    এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রবি সিং সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর আবেদনে সাড়া মেলেনি। কেউ এগিয়ে আসেননি তাঁর দুঃসময়ে।
    তবে এই নীরবতা ভেঙে এক মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন গন্ডাছড়া মহকুমা এলাকার আরেক সাংবাদিক রামু দেবনাথের মা, মায়ারানী দেবনাথ। মঙ্গলবার সকালে ৭৫ বছরের এই সমাজসেবিকা, ছেলে রামু দেবনাথকে সঙ্গে নিয়ে ডুম্বুরনগর ব্লক সংলগ্ন রবি সিং-এর বাড়িতে উপস্থিত হন।
    তিনি অসুস্থ সাংবাদিকের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতে তুলে দেন ৫০০০ টাকা। এই অনাকাঙ্ক্ষিত গভীর মানবিক মুহূর্তে রবি সিং আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কান্না চেপে রাখতে না পেরে বলেন, “জীবনে বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, অনেকের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরেছি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। কিন্তু আজ যখন নিজে অসহায়, তখন কাউকে পাশে পাচ্ছি না। এমন সময় এই মা যেভাবে আমার পাশে দাঁড়ালেন, তা কখনও ভুলবো না।”
    উল্লেখ্য, মায়ারানী দেবনাথ শুধু একজন মা নন, বরং একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবিকা। তিনি একজন পেনশনার হলেও তার পেনশনের টাকাতেই বছরের পর বছর ধরে নানা অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আসছেন। কারও শিক্ষার খরচ, কারও চিকিৎসার ব্যয়—সব ক্ষেত্রেই তিনি চুপিসারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কখনও প্রচারের আলোতে আসেননি, নীরবে নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
    মায়ারানী দেবনাথ আগেও বহুবার অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে কখনই ‘সমাজসেবী’ বলে দাবি করেন না। তাঁর মতে, “যা করছি, সেটা দায়িত্ব। সমাজের জন্য কিছু করা আমাদের সবার কর্তব্য।”
    এই ঘটনার পর গোটা এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন তিনি। একজন সাংবাদিকের মা হয়ে আরেক সাংবাদিকের জন্য যে সহানুভূতি ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন, তা শুধু মানবিকতার নিদর্শন নয়, সমাজের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল—মানবতা এখনও বেঁচে আছে, শুধু দরকার সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। রবি সিং-এর সুস্থতা কামনায় এখন অনেকেই এগিয়ে আসছেন, যা এই ছোট অথচ শক্তিশালী ঘটনার ইতিবাচক প্রভাব বলেই মনে করা হচ্ছে।
    এই মুহূর্তে একটাই প্রার্থনা—রবি সিং যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও কলম হাতে ফিরতে পারেন সেই পথচলায়, যা দিয়ে তিনি সমাজকে সারা জীবন আলোকিত করে এসেছেন।

You may also like

Leave a Comment