Home ভারত আতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে বিশালগড়

আতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে বিশালগড়

by admin
0 comment 69 views

প্রতিনিধি, বিশালগড়, ২২ আগস্ট।। স্মরণাতীত কালের সকল রেকর্ড ম্লান হয়ে গিয়েছে। প্রবীণরা বলছে প্রায় ত্রিশ বছর আগে একবার এমন জলের তান্ডব দেখেছিল বিশালগড়। বুধবার বিকালের পর জলস্তর বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছেই জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করে। বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ে বিজয় নদের জল। রাতের বেলায় উদ্ধার কাজ সহজ ছিল না। চারিদিকে জলবন্দী মানুষের হাহাকার শুরু হয়। বুধবার সাংগঠনিক কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুশান্ত দেব। দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য কার্যকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে যান তিনি। দলের কার্যকর্তা এবং প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্গতদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকার মানুষের এই কঠিন পরিস্থিতিতে দিল্লিতে সাংগঠনিক বৈঠক ফেলে রেখে রাতেই আগরতলার বিমান ধরেন বিধায়ক সুশান্ত দেব। সকাল সাতটায় বিশালগড় পৌঁছে মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন তিনি। টিএসআর, এনডিআরএফ, প্রশাসন, দলের কার্যকর্তা একযোগে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে। জলবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় শিবিরে নেয়া হয়। বিধায়ক সুশান্ত দেব জানান প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। বিশালগড়ের জাঙ্গালিয়া স্কুলে, ভদ্রাবতী স্কুলে, লক্ষীবিল স্কুল, কড়ুইমুড়া স্কুল নবীনগর স্কুলে সরকার ভাবে আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে এবং বাড়িতে জলবন্দী মানুষের হাতে শুকনো খাবার শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিধায়ক সুশান্ত দেব দিনভর কখনো উদ্ধার কাজ কখনো ত্রাণ বিলি করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে রঘুনাথপুর এলাকায় কলা গাছের ভেলা নিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান বিজেপি কার্যকর্তা রাজেশ সাহা সহ স্থানীয়রা। নেতাজিনগরে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন যুব মোর্চার প্রদেশ সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা। বিধায়কের অনুপ্রেরণায় চেলিখলা, নবীনগর, রাউৎখলা, দুর্গানগর, দোগাঙ্গি, লক্ষীবিল প্রভৃতি এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগায় বিজেপি কার্যকর্তারা। নয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। অনেকে বাড়িতেই জল কমার অপেক্ষা করছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গিয়েছে। উত্তর আউৎখলা এলাকার বাসিন্দারা মিলিতভাবে একটি উঁচু স্থানে রাত কাটিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় বিশালগড় বিধানসভায় ১৫ হাজার মানুষ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছেন। বিশালগড়ের পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি জমি এবং পুকুর জলের নিচে ডুবে গিয়েছে। বিশালগড় বাজার, জাতীয় সড়ক, মোটর স্ট্যান্ড, বাইপাস সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিশালগড় মহকুমা হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা অসুস্থ রোগীদের কাঁধে তুলে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালের পর জলস্তর খানিকটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু আতঙ্কের কালো মেঘ এখনো কাটেনি। তবে বিশালঘরে হতাহতের কোন খবর নেই। বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা পরিষেবা স্বাভাবিক করতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করছে। বিকালের পর কিছু এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। গোলাঘাটির বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। তিনি গোলাঘাটি হাই স্কুলে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। ঘূর্ণিঝড়ে গোলাঘাটি বাজারের নাট মন্দিরটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। কেন্দ্রীয় প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বাজার কমিটির সদস্যদের বলেন উনার সংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের এই নাট মন্দির পুনরায় নির্মাণ হবে। প্রবল বর্ষনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশালগড় মহকুমার একাংশ সাংবাদিক । চড়িলামের সাংবাদিক সমীর ভৌমিকের মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাতভর জলবন্দী ছিল সাংবাদিক জীবন সাহা, কৌশিক অধিকারী, মান্নান হক, কুমার গৌরব রায়, এরশাদ মিয়া, জুয়েল সাহা, সৌরভ সাহা, সায়ন সাহা, রাসেল আহমেদ, । সাংবাদিক গৌতম ঘোষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সাংবাদিক প্রসেনজিৎ রায়ের পৈত্রিক ভিটায় জল উঠেছে। বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারী দল সাংবাদিক জীবন সাহা এবং কৌশিক অধিকারীর পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

Related Post

Leave a Comment