প্রতিনিধি কৈলাসহর:-কৈলাসহর মহকুমায় মহকুমা শাসক থাকাকালীন মানুষের সাথে যেভাবে মিশে গিয়েছিলেন।তখনের বিদায়ও কাঁদিয়ে ছিল মহকুমা বাসীকে।ঊনকোটি জেলার জেলা শাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আই এ এস অফিসার ডঃ বিশাল কুমার।কর্মসুত্রে একসময় এই ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর মহকুমায় মহকুমা শাসক হিসেবে অনেক দিন দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন ডঃ বিশাল কুমার।আর কৈলাসহরটা উনার ছিলো নখদর্পণে। একদিকে মানুষের জন্য উনার একশ শতাংশ বিলিয়ে দেওয়া এবং কর্মক্ষেত্রে একজন কঠোর আধিকারিক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ডঃ বিশাল কুমার।তবে সরকারী পরিষেবা একদম শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত যাতে পৌঁছানো যায় যখন মহকুমা শাসক ছিলেন তখন যেমন কাজ করেছেন জেলা শাসক হওয়ার পরও ঠিক একই কায়দায় কাজ করছিলেন।যখন যে মানুষই উনার সাথে দেখা করতে যেতেন উনার অফিসে কিংবা উনার সরকারী আবাসে অবাধেই দেখা করতে পারতেন সকলে।এছাড়াও গোটা ঊনকোটি জেলায় প্রতিটি সরকারী অফিসে সঠিক কর্ম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে কখন কোনো কোনো অফিসে বসিয়েছেন ফিঙ্গার ফ্রিন্ট ডিভাইস আবার কোথাও বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।আর এর কারনে অনেক গুলো অফিসে সঠিক কর্ম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতেও অনেকটাই সফলও হয়েছেন উনি।ঊনকোটি জেলার জেলা শাসক হিসেবে প্রথম দায়িত্বভার গ্রহণ করার প্রথম দিনই জেলা শাসক অফিসের সমস্ত কর্মচারীদের নিয়ে এক আলোচনা বৈঠক হয় এবং উনি বলেন যে আমরা সরকারী কর্মচারীরা যদি সঠিক ভাবে মানুষের অভাব অভিযোগ মূল্যায়ন করে কাজ করি তাহলেই এই জেলা এগিয়ে যাবে।আর তা সম্ভব হবে তখনই যখন আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবো। দিনের পর দিন টেবিলে ফাইল পড়ে থাকবে আর সেটা আমাদের নজরে এলেও শুধুমাত্র আমাদের খামখেয়ালীপনার জন্য দেরি হবে সেটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবেনা।অফিসের প্রথম দিনেই এই ধরনের বার্তায় জেলা শাসক অফিসের সঠিক কর্ম সংস্কৃতি ফিরেছে বলে অনেকেরই অভিমত।এছাড়াও বিভিন্ন সাধারণ মানুষের জন্য উনার কাজ মানুষের মনের গভীরে জায়গা করে নিয়েছেন ডঃ বিশাল কুমার।ডঃ বিশাল কুমারের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ট্রান্সফার মেনে নিতে পারেননি ঊনকোটি জেলার অধিকাংশ মানুষ।উনার বদলির খবর পেয়ে কেউ বিদায়ী সংবর্ধনা দিচ্ছেন কেউ আবার উনার কাছ থেকে বিভিন্ন রকম সাহায্য পেয়েছেন যার জন্য দেখা করতে আসছেন শেষবারের মতো।ঠিক এমনই একটা চিত্র ধরা পড়েছে আজ সন্ধ্যায় জেলা শাসকের সাথে দেখা করতে যাওয়া একজন মহিলা এবং এক ২০/২২ বৎসরের যুবতীর।হঠাৎ জেলা শাসকের অফিস কক্ষ থেকে বেরোনোর সময় হাউমাউ করে কান্না করছিলেই ঐ মহিলা।তখন উনার সাথে দেখা করতে যাওয়া ও বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে যাওয়া সকল প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের চোখে পড়ে এই ঘটনা।কৌতূহল বসত যখন আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি উনাকে জিজ্ঞেস করেন তখন উনি চোখে জল নিয়েই বলছিলেন দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটতোনা আমাদের পরিবারের,বিশাল স্যার আমাদের ভাত কাপড় দুটোরই ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন।আর তাই মানুষরুপী এই ভগবানের সাথে শেষ দেখা করতে এসে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি।উনার চলে যাওয়ার পর প্রেস ক্লাবের সদস্য প্রলয়েন্দু চৌধুরী,চারুকৃষ্ণ কর,দেবাশীষ দত্ত,অনুপম পাল,সুকান্ত চক্রবর্তী,অরিন্দম দে,অয়ন মজুমদার ও বিশ্বজীৎ ভট্টাচার্যরা মিলে উনাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য বিদায়ী সংবর্ধনা দেন। জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমারের সাথে সেই মহকুমা শাসক থাকা কালিন থেকেই একটা সু-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যা জেলা শাসকের পর আরো একধাপ বেড়ে যায় এবং একটা হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে।উনার অফিস কক্ষে উনাকে বিদায় সংবর্ধনা দিতে গিয়ে এক গুরুগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।একসময় কথা বলতে জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার ভাবুক হয়ে পড়েন এবং উনার চোখের কোন অশ্রুসিক্ত ছিল।কিছুক্ষণের জন্য অফিস কক্ষে একটা নিস্তব্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয় প্রেস ক্লাবের সকল সদস্যরাই একসময় চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি। উনার হাত ধরে বিগত কয়েক মাসেই এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের পথে এগোচ্ছিল গোটা ঊনকোটি জেলা।যদিও গোটা ঊনকোটি জেলায় বহুবার বহু জেলা শাসক এসেছেন কিন্তু উনার চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গোটা ঊনকোটি জেলার মানুষ যেভাবে ভাবুক হয়ে পড়েছেন তা লক্ষ্য করা যায়নি অন্য কোনো জেলা শাসকের ক্ষেত্রে।তবে বিদায় বেলায় জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমার কৈলাসহরবাসীর জন্য এক সুখবর শোনিয়ে গেলেন। খুব শীঘ্রই কৈলাসহরে পর্যটন হাব গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে বলে জানান জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমার।কৈলাসহরের মনুভ্যালী চা বাগান,সোনামুখি চা বাগান, ঊনকোটি এবং খাওড়াবিল এই চারটি পর্যটন কেন্দ্রকে নিয়ে একটি পর্যটন হাব গড়ে তোলা হবে।এর জন্য মোট ৬০ কোটি টাকা খুব শীঘ্রই বরাদ্দ হবে এবং এই ষাট কোটি টাকার মধ্যে ইতিমধ্যেই বারো কোটি টাকা ঊনকোটির জন্য বরাদ্দ হয়ে গেছে।এই খবর সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রকাশ হতেই কৈলাসহরের সর্বত্র খুশীর হাওয়া বইছে।তবে জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমারের পর্যটন হাবের উপহার আগামী দিনে কোনো রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পিছিয়ে না পড়লে কৈলাসহরবাসীর জন্য একটি বিশেষ উপহার হবে বলে ধারনা শহরবাসীর।
108
previous post